,
প্রচ্ছদ | জাতীয় | আন্তর্জাতিক | অর্থনীতি | আমেরিকা | লাইফ স্টাইল | ভিডিও নিউজ | ফিচার | আমেরিকা | বিনোদন | রাজনীতি | খেলাধুলা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | শিক্ষা

ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পদে বাংলাদেশের রুদমিলা

স্টাফ রিপোর্টারঃ ব্রিটিশ নাগরিকত্ব দূরের কথা, যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও হয়নি তাঁর। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারের উচ্চ পদে কাজ করছেন বাংলাদেশের মেয়ে রুদমিলা। অভিবাসন আইনের কড়াকড়ি, নাগরিকত্বের ভিন্নতা কিংবা লাল পাসপোর্টধারীদের দাপট—সবকিছুই হার মেনেছে সবুজ পাসপোর্টধারী এই বাঙালি মেয়ের মেধার কাছে।

পুরো নাম রুদমিলা আজাদ। দুর্নীতি দমনে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান ‘সিরিয়াস ফ্রোড অফিস—সিএফও’-এ চাকরি করছেন তিনি। তাঁর পদের পোশাকি নাম—ফাইন্যান্স বিজনেস পার্টনার। ‘সিরিয়াস ফ্রোড অফিস’ বা এসএফওর কাজ হলো বড় বড় আর্থিক দুর্নীতি ও প্রতারণার তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা। যুক্তরাজ্যে সরকারি চাকরিতে সাধারণত পাঁচটি ধাপ বিদ্যমান। রুদমিলার পদটি তৃতীয় ধাপের। বাংলাদেশের হিসেবে রুদমিলার পদটিকে বলা যেতে পারে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার। এর এক ধাপ পরই সর্বোচ্চ পদ ‘সিনিয়র সিভিল সার্ভেন্ট’; যাঁরা স্থায়ী সচিব বা বিভাগীয় প্রধানের কাজ করেন।

সম্প্রতি পূর্ব লন্ডনের নিউহামে রুদমিলার বাসায় বসে তাঁর গল্প শোনা হলো। স্বামী মাহমুদ শওকত আজাদও সঙ্গ দিলেন আলাপচারিতায়।

এসএফওতে যেভাবে নিয়োগ

যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের নাগরিকেরা কাজের অনুমতি থাকলে সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে অনলাইনে আবেদন করেন রুদমিলা। প্রাথমিক বাছাই শেষে তিনটি ধাপে—মৌখিক, গাণিতিক ও পরিস্থিতিগত বিবেচনা-বিষয়ক পরীক্ষা। তারপর সাক্ষাৎকার। এই পর্যায়ে কেবল দুজন উত্তীর্ণ হন। তাঁদের চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। রুদমিলা অনেকটা একই সময়ে ‘ইউকে এক্সপোর্ট ফাইন্যান্স’ বিভাগের সমপর্যায়ের একটি পদেও আবেদন করেন। দুটিতেই নিয়োগের চূড়ান্ত ডাক পান। তিনি এসএফওর পদটি বেছে নেন।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বেতনভোগী ছাড়া যেকোনো বাংলাদেশি বিদেশি সরকারের কাজ করতে পারেন। তিনি রুদমিলার সাফল্যকে বাংলাদেশিদের জন্য গৌরবের বলে মন্তব্য করেন।

রুদমিলার কাজটা কী

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে একজন নির্বাহী পরিচালকের অধীনে তিনটি বিভাগ রয়েছে—চিফ ইনভেস্টিগেটর, জেনারেল কাউন্সিলর ও চিফ অপারেটিং অফিসার। এগুলোর আছে আবার উপবিভাগ। জেনারেল কাউন্সিলের অধীনে ‘ব্রাইবারি অ্যান্ড করাপশন ডিভিশন’। এই বিভাগেই প্রধান (ফাইন্যান্স বিজনেস পার্টনার) রুদমিলা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তিনি এ কাজে যোগ দেন। তাঁর বিভাগের কাজ নিয়মিত আয়-ব্যয়ের হিসাব, বাজেট প্রণয়ন, খরচের পূর্বাভাস, লোকবল নিয়োগের আর্থিক সামর্থ্য যাচাই ইত্যাদি। রুদমিলা বললেন, এসএফও স্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর বোর্ডে নির্বাহী পরিচালকদের জবাবদিহির জন্য আছেন অনির্বাহী পরিচালকেরা। তবে বিচার বিভাগের অধীন এই প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জবাবদিহি করে। অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে তদন্তের শুরু থেকে এর নিজস্ব হিসাব নিরীক্ষক ও আইনজীবীরা যুক্ত থাকেন।

আমেরিকান দূতাবাস দিয়ে শুরু

২০১০ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে আসেন রুদমিলা। বিয়ের পর ২০১৫ সালে ‘স্পাউস ভিসায়’ স্থানান্তরিত হলে পেয়ে যান পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ। পড়াশোনা তখনো শেষ হয়নি। ২০১৬ সালে প্রথম চাকরির কথা চিন্তা করেন। শুরুতেই লন্ডনের আমেরিকান দূতাবাস। ব্রিটিশ, মার্কিন বা ইউরোপীয়—সব আবেদনকারীকে পেছনে ফেলে রুদমিলা সেখানে ‘গ্র্যাজুয়েট অ্যাকাউন্টস পেয়েবল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ পদে যোগ দেন।

ঝটপট কাজ, বুদ্ধিদীপ্ত কথার ধরন দিয়ে এই বাঙালি মেয়ে বুঝিয়ে দেন একজন বাংলাদেশিকে চাকরি দিয়ে ভুল করেননি নিয়োগকর্তারা।              একপর্যায়ে অন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বও দেওয়া হয় তাঁকে। ‘ই-ইনভয়েসিং’ বিষয়ে ১১০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বছরের সেরা কর্মীর স্বীকৃতি ‘ইনডিভিজ্যুয়াল মেরিটোরিয়াস অনার অ্যাওয়ার্ডস’ জিতে নেন। পুরস্কার হিসেবে তাঁকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয় ‘বেসিক ইনভয়েস এক্সামিনেশন’ বিষয়ে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে। ২০১৬ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ কাজে ছিলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে নিজের কর্মক্ষেত্রে রুদমিলারাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিরল অভিজ্ঞতা

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে দেশে দেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের রদবদল শুরু হয়। লন্ডন দূতাবাসে প্রতিটি বিভাগ থেকে একজন কর্মী নিয়ে গঠিত হয় যাচাই-বাছাই কমিটি। ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে ছিলেন রুদমিলা। এই কমিটি মূলত সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের স্বার্থের দ্বন্দ্বের (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে।

রুদমিলা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর সম্ভাব্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়ে দেয়। লন্ডনের জন্য আগ্রহী ছিলেন প্রায় ২৫০ জন। সেখান থেকে উডি জনসন নিয়োগ পান।

তুখোড় শিক্ষাজীবন

আরিফ আহমেদ ও রাজিয়া বেগম দম্পতির এক ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে রুদমিলা বড়। জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের উইলিয়াম কেরি একাডেমিতে শিক্ষাজীবন শুরু। এখান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা ‘আইইএলটিএস’-এ                   পেয়েছেন ৯। ২০১০ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে আসেন যুক্তরাজ্যে। ভর্তি হন লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে অর্থায়ন বিষয়ে প্রথম শ্রেণি পেয়ে স্নাতক করেন। তারপর ব্রাইয়ারলি প্রাইস প্রাইয়র (বিপিপি) বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্টস বা এসিসিএ পড়া শুরু করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স’ বিষয়ে ২০১৫ সালে ‘ডিসটিংকশন’ পেয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এসিসিএ শেষ হয় ২০১৭ সালের জুলাইতে। বিপিপিতে পড়া অবস্থায় ‘ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন’র শেফার্ড বুশ শাখার সভাপতি ছিলেন। রুদমিলা দেশটির ‘হায়ার এডুকেশন একাডেমি’র সহযোগী ফেলো। অর্থাৎ দেশটিতে তিনি শিক্ষকতাও করতে পারবেন। যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে বা নির্ভরশীল হয়ে আসা বাংলাদেশিরা সাধারণত শ্রমনির্ভর কাজ  করেন। বেশি হলে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজের চেষ্টা করেন। মেধাবীরাও এর বাইরে চিন্তার সাহস পান না। রুদমিলার এই সাফল্যের গল্প বাংলাদেশিদের ‘বৃত্তের বাইরে’ চিন্তার খোরাক জোগাবে।

Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali
Managing Director: Akbar Hossain
Executive Editor: Mehedi Hasan
E-mail : abnanewsusa@gmail.com
Usa Office: 289 West Koach Avenue, Egg harbor City, New Jersey-08215, Bangladesh Office : 60/1. Purana Paltan (2nd Floor), Dhaka-1000, Usa. Phone: +16094649559, Cell:+8801711040113, +8801912-621573
Server mannarged BY PopularServer
Design & Developed BY PopularITLimited